পাকিস্তানের রোমাঞ্চকর জয়

সোহেল খানের বলটা একটু লাফিয়ে উঠলো। সেই বল খেলার চেষ্টায় ব্যর্থ এবি ভিলিয়ার্স। ব্যাটে বলটা চুমু খেয়ে উইকেটের পেছনে সরফরাজের গ্লাভসে গিয়ে জমা হয়। পাকিস্তানের উল্লাসটা এমন তখন যেন ম্যাচটা জিতেই গেলো তারা!

আসলে জিতলোই তো! আর এক উইকেট বাকি তখন। ৩২ রান দরকার জিততে। দক্ষিণ আফ্রিকার শেষ উইকেট জুটি উজ্জীবীত পাকিস্তানী বোলারদের সামনে আর কি করবে! কিছুই করতে পারে নি। তীরে এসে তরী ডুবিয়ে ভিলিয়ার্স ড্রেসিং রুমে। দক্ষিণ আফ্রিকার মতো শক্তিশালী দল ২৩২ রানের টার্গেট অর্জনে ব্যর্থ। ২০২ রানে শেষ প্রোটিয়ারা। আর বৃষ্টি আইনে ২৯ রানের জয় নিয়ে আকাশ বাতাস কাঁপিয়ে তোলে পাকিস্তান। ৫ ম্যাচে ৩ জয় নিয়ে পাকিস্তান কোয়ার্টার ফাইনালের আশাটা ভালো করেই ধরে রাখলো।

আগের দিন পাকিস্তানের অধিনায়ক মিসবাহ উল হক বলেছিলেন, ২৫০ রান করলেও তাদের বোলাররা সেই পুঁজি ধরে রেখে লড়াইয়ে জেতাতে জানে। এদিন মিসবাহর এর বলা অতোটা সংগ্রহও পায়নি। মাত্র ২২২ রান করেছে। যা বৃষ্টি আইনে টার্গেট হিসেবে দাঁড়িয়েছে ৩৩২ রানে। এই সংগ্রহ ধরে রেখে যে লড়তে পারবে পাকিস্তান তার ইঙ্গিত দ্বিতীয় বলেই দিয়েছেন ইরফান খান।

পাকিস্তানীদের উচ্ছল করে তোলেন ইরফান। ডি কক শুন্য হাতে বিদায় নেন। সরফরাজ এই ম্যাচে ৬টা ক্যাচ নিয়েছেন উইকেটের পেছনে। তার প্রথমটি ডি ককের। এরপর ইনিংসের সর্বোচ্চ জুটিটা হয়েছে হাশিম আমলা ও ডু প্লেসিসের মধ্যে। ৬৭ রান এসেছে। মনে হচ্ছিলো সব ঠিক আছে। কিন্তু ১০ রানের মধ্যে ৪ উইকেট তুলে নিয়ে পাকিস্তানী বোলাররা ম্যাচটাকে ঘুরিয়ে ফেলেন নিজেদের দিকে। ডু প্লেসিস (২৭), আমলা (৩৮), রুসো (৬), মিলাররা (০) ৬৭ থেকে ৭৭ রানের মধ্যে ড্রেসিং রুমে। ওয়াহাব আর রাহাত মিলে প্রোটিয়াদের চাপের মধ্যে ফেলে ধ্বংস করার শুরুটা করেছেন।

৭৭ রানে ৫ উইকেট তুলে নিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার ওপর চাপটা আরো বাড়িয়েছেন বোলাররা। শেষ ব্যাটসম্যান ডুমিনি (১২) ইরফানের বলে বিদায় নিলে ম্যাচ পুরোটাই যেন হেলে পড়ে পাকিস্তানের দিকে। লড়ে যাচ্ছিলেন ডি ভিলিয়ার্স। শেষে গিয়ে লোয়ার অর্ডারের ব্যাটসম্যানদের নিয়ে তার লড়াই শুরু হয়। একটু বাজে বল পেলেই চার বা ছক্কায় রূপ দিচ্ছিলেন ডি ভিলিয়ার্স। তারপরও মনে হয়েছিলো, ডি ভিলিয়ার্স একটু শটের রাশ টানলে ভালো করতেন। তা টানা হয়নি। আক্রমণ করে গেছেন তিনি। সেই আক্রমণের পরিণতি শেষে সরফরাজের তালুবন্দি হওয়ার মধ্যে দিয়ে শেষ হয়েছে। ৫৮ বলে ৭৭ রান তার। কিন্তু রুদ্ধশ্বাস একটা জয় তুলে নিয়ে পাকিস্তান তাদের আত্মবিশ্বাসটা বাড়িয়ে নিতে পেরেছে চমৎকারভাবে। ইরফান, রাহাত আর ওয়াহাব নিয়েছেন তিনটি করে উইকেট। ৬টি ক্যাচ নিয়েছেন সরফরাজ। স্পর্শ করেছেন ইউকেট কিপার হিসেবে সবচেয়ে বেশি ডিসমিশালের বিশ্বরেকর্ড। তার সাথে যোগ হয়েছে তার ৪৯ রান। বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচ খেলেই সেরা
সরফরাজ।

এর আগে প্রথমবার যখন বৃষ্টির জন্য খেলা থামে তখনো ফিফটি হয়নি মিসবাহ উল হকের। এরপর ফিরে এসে ফিফটি করলেন। আবার নামলো বৃষ্টি। আবার বিশ্রাম। অতঃপর ফেরা। বৃষ্টির কারনে এই যাওয়া আসা আর ফেরার মধ্যে মনযোগের কিছুটা হয়তো হারিয়ে ফেলে থাকবেন মিসবাহ। তাই স্টেইনের বলে ক্যাচ তুলে দিয়ে ফেরার সময় নিজেকেই যেন নিজে বলছিলেন, ঠিক হলো না। এভাবে ফেরা মোটেও ঠিক হলো না। আর মাত্র কয়েকটি ওভার ছিলো। খেলতে পারলে আরো কিছু রান হতো। দলের উপকার হতো তাতে। রান তো তেমন কেউ করতে পারলেন না। মিসবাহ অষ্টম ব্যাটসম্যান হিসেবে ফেরার সময় পাকিস্তানের সংগ্রহ ২১৮ রান। আর ২২২ রানেই ৪৬.৪ ওভারে অল আউট পাকিস্তান।

টানা তৃতীয় ম্যাচে ফিফটি করেছেন মিসবাহ। আর এই বিশ্বকাপে এটি তার চতুর্থ ফিফটি। মিসবাহ এখন পাকিস্তান দলের প্রতিরোধের অন্য নাম। দল দ্রুত উইকেট হারায়। মিসবাহ আসেন। একটা, দুটো, তিনটা জুটি গড়েন। পাকিস্তান কিছু রান করতে পারে। এভাবেই চলছে পাকিস্তান।

এই ম্যাচেও টস হেরে ব্যাট করে তাদের গল্পটা খুব ব্যতিক্রম নয়। নাসিরের জায়গায় সরফরাজ ইনিংস ওপেন করেছেন। অভিজ্ঞ ইউনিস খান আবার ফিরেছেন। আর এই দুইয়ের ব্যাটে কিছুটা রান পেয়েছে পাকিস্তান। শেহজাদ (১৮) দলের ৩০ রান চলে গেলেও ইনিংস সর্বোচ্চ ৬৩ রানের জুটি গড়ে ওঠে সরফরাজ ও ইউনিসের মধ্যে। ওই জুটিটাই ভালো ভিত্তি দিয়েছে পাকিস্তানকে। কিন্তু সেই ভিতের ওপর শক্তপোক্ত কিছু করতে পারেনি পাকিস্তান। বলা ভালো করতে দেয়নি দক্ষিণ আফ্রিকার বোলাররা। তাদের চমৎকার বোলিংয়ে একটা সময়ে গিয়ে নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারাতে থাকে পাকিস্তান। সরফরাজ ৪৯ রান করেছেন, ইউনিসের ব্যাট থেকে এসেছে ৩৭ রান।

এই দুই ব্যাটসম্যান চলে যাবার পর ইনিংসের বাকি গল্পটা কেবলই মিসবাহর। ছোটো ছোটো জুটি গড়ার চেষ্টা করেছেন। ইউনিস আর মিসবাহ তৃতীয় উইকেটে ৪০ রানের জুটি গড়েছেন। আফ্রিদিকে নিয়ে ষষ্ঠ উইকেটে ৩৭ রানের জুটি গড়েছেন মিসবাহ। এভাবেই দলের সংগ্রহ বাড়িয়েছেন মিসবাহ। আফ্রিদি ১৫ বলে ২২ রানের একটা ঝড় তুলে শেষ। ৮৬ বলে মিসবাহর ৫৬ রানের প্রতিরোধের গল্প শেষ হয়েছে। মাত্র ৪টি চার মেরেছেন মিসবাহ। স্টেইন নিয়েছেন ৩ উইকেট। দুটি করে উইকেট অ্যাবট ও মর্কেলের।

Related posts

Leave a Comment